কিভাবে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে ?
লেখা এবং বাংলা ভাষার ইতিহাস
বিভিন্ন সভ্যতায় চিহ্নের সাহায্যে ভাষাকে প্রকাশ করার পদ্ধতি কিভাবে বিকশিত হয়েছে তার ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, বর্তমান লিখন পদ্ধতির পূর্বে
প্রোটো-লিখন পদ্ধতির বিকাশ হয়। প্রোটো-লিখনপদ্ধতিতে ছবির সাহায্যে (ধারকলিপি) কিংবা নেমনিকের সাহায্যে ভাষাকে প্রকাশ করা হত। সত্যিকারের লিখন পদ্ধতির বিকাশ আরো পরে হয়েছে,
যেখানে উচ্চারিত শব্দকে চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়, যাতে পাঠক উচ্চারিত শব্দ অনেকখানি পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এটি প্রোটো-লিখন পদ্ধতি থেকে আলাদা, যাতে সাধারণ ব্যাকরণগত শব্দ এবং প্রত্যয় অনুপ্স্থিত থাকে। ফলে এ থেকে সঠিক অর্থ পুনরুদ্ধার করা কঠিন; যদি না কি প্রসঙ্গে লিখা হয়েছিল সে ব্যাপারে আগে থেকে জানা না থাকে?
ভাষা লিখনের বহু পূর্বে সংখ্যা লিখনের সূচনা হয়।
পৃথিবীর প্রায় সকল লিপিই একটি মূল লিপি থেকে উদ্ভব হয়েছে। এই লিপির নাম হলো ফিনিশীয় লিপি। প্রাচীন ফিনিশীয়গণ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণের আবিষ্কার করেন। গ্রীকগণ এর সঙ্গে যোগ করেন স্বরবর্ণ (vowels), যা থেকে আধুনিক ইউরোপীয় বর্ণমালার উদ্ভব এবং ভারতবর্ষ তথা বাংলার লিপি ও সংখ্যা তত্ত্বের লিখন পদ্ধতির রয়েছে ইউরোপীয় বর্ণমালা থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
সত্যিকারের লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন স্বাধীনভাবে অন্তত দুই জায়গায় ঘটেছিল: মেসোপটেমিয়াতে (প্রাচীণ সুমের) ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এবং মেসোয়ামেরিকাতে ৯০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের দিকে।
ছবি আঁকার সেই প্রক্রিয়াটিই ছিল মানুষের লিপি আবিষ্কারের প্রথম উদ্যোগ। গাছে দাগ কেটে বয়স বোঝানো কিংবা পাহাড়ের গায়ে চিহ্ন দিয়ে কোনো বিশেষ ঘটনা বোঝানোর চেষ্টাটিই ছিল আদিম লিপির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
মানুষ মুখে মুখে নানা ধরনের শব্দ বা ধ্বনি তৈরি করেছে। এই ধ্বনির লিখিত রূপকেই আমরা লিপি বলি। লিপি হচ্ছে Concrete আর ধ্বনি হচ্ছে Abstract. কারণ লিপিকে চোখে দেখা যায় কিন্তু ধ্বনিকে দেখা যায় না; সেটি শুনতে হয়। সেজন্য লিপিকে দৃশ্যরূপ আর ধ্বনিকে শব্দরূপ নিতে হয়। আদিম মানুষের চিত্র অঙ্কনের ধারণা থেকে ক্রমে লিপির উদ্ভব ঘটে।
একথা তো আমরা সবাই জানি যে, বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা। এ ভাষায় অনেক বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। প্রতিনিয়ত বিদেশি শব্দগুলোকে আমরা কথনে ও লিখনে নিজেদের শব্দ হিসেবে ব্যবহার করছি। কিন্তু খুব কম লোকই আছেন যারা কোন্ শব্দটি কোন্ ভাষা থেকে কিভাবে বাংলা ভাষায় এসেছে সে বিষয়ে বিশদ খোঁজ-খবর রাখেন। যারা ভাষা নিয়ে সামান্য হলেও চর্চা করেন তাদের অন্তত এ বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা থাকা জরুরি।
আমাদের গর্বের বাংলা ভাষা সবচেয়ে বেশি বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয় সাহিত্যের মাধ্যমে। এরপরই ভাষাচর্চার বড় জায়গা হচ্ছে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম। সাহিত্যে ভাষার সৌন্দর্য কিছুটা রক্ষিত হলেও গণমাধ্যমে ভাষা ব্যবহারে প্রায়শই নৈরাজ্য ও অরাজকতার দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়।